সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে, যা বিচার ও তদন্তের স্বার্থে তাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনার প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তোহিদ হোসেন গত ১৫ আগস্ট লন্ডনভিত্তিক একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন যে, যদি আইন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনার জন্য ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হবে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল। ভারতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত জরুরি। যদিও ভারত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ বিবেচনায় রাখে, এবারের পরিস্থিতি বিশেষত আলাদা। শেখ হাসিনা, যিনি ভারতের একজন বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে পরিচিত, তার স্বার্থ এবার ভারতের বিবেচনায় অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ ও ভারত ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করে, চুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয়, অথবা তিনি দোষী প্রমাণিত হন, তবে তাকে আদালতের মাধ্যমে তার নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এমন অপরাধ যার জন্য সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, পাশাপাশি আর্থিক অপরাধও এতে অন্তর্ভুক্ত। তবে, প্রত্যর্পণ এর ক্ষেত্রে “দ্বৈত অপরাধ নীতি” অবশ্যই প্রযোজ্য হবে, অর্থাৎ অপরাধটি উভয় দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হতে হবে।
ওই প্রত্যর্পণ চুক্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি ফেরত চাওয়া ব্যক্তির অপরাধটি রাজনৈতিক প্রকৃতির হয়, তবে তাকে প্রত্যর্পণ করা হবে না। তবে, মাদকদ্রব্য বা অস্ত্র তৈরি, সেগুলি নিজের কাছে রাখা, কাউকে অপহরণ বা জিম্মি করা, হত্যার প্ররোচনা, গ্রেফতার এড়াতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, এবং সন্ত্রাস সম্পর্কিত অন্যান্য অপরাধকে এই চুক্তির আওতায় রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। এই সবগুলো অপরাধই প্রত্যর্পণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
এই পরিস্থিতিতে, শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন, যা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পারে। ভারতের জন্য এটি একটি সংকটময় মুহূর্ত, যেখানে তাকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দায়িত্বের সঙ্গে তার অভ্যন্তরীণ মিত্রদের সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।