করপোরেট জীবনের ক্লান্তি যদি ছুটির দিনেও ভর করে তাহলে ‘নো সাইড ম্যানেজার’ নামের টিভি সিরিজটি আপনার জন্য। জাপানি লেখক জুন ইকেইদোর লেখা একই নামের উপন্যাস থেকে বানানো সিরিজটি দেখা যাবে নেটফ্লিক্সে।
সম্প্রতি সিরিজটি যখন দেখতে বসি, তখন শুরুতেই খটকা লাগে- আরেহ, এটা তো রাগবি খেলা নিয়ে। যে খেলা নিয়ে নূন্যতম ধারণা ও আগ্রহও আমার নেই। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসে করপোরেট জীবনের একেকটি প্রতিকূল পরিস্থিতি। যেগুলো কাটিয়ে ওঠার টোটকা বলা হচ্ছে রাগবির মাধ্যমে।
জাপানের একটি মোটরযান নির্মাতা কোম্পানিতে কাজ করেন হায়াতো কিমিশিমা। এই কোম্পানি একটি রাগবি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ‘অফিস পলিটিক্সের’ শিকার কিমিশিমাকে এক সময় কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে বদলি করে দেওয়া হয় রাগবি দলের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব। বেচারা কিমিশিমার রাগবি নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। ফলাফল- একের পর এক চ্যালেঞ্জ আসে তাঁর সামনে।
সিরিজের কাহিনী সরল হলেও গভীর। কিমিশিমার চরিত্রে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে। করপোরেট কৌশলে দক্ষ কিমিশিমা এক সময় রাগবি দলের অপেশাদার খেলোয়াড়দের মাঝে প্রাণের সঞ্চার করেন। পাশাপাশি তাঁর পারিবারিক জীবনের জটিলতা, সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা, কর্মক্ষেত্রের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে টানাপোড়েনও গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।
সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমস্যা সমাধানে জাপানি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহার। করপোরেট সংস্কৃতি অনেক ক্ষেত্রে দেশভেদে প্রায় একই রকম। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলা বা সমস্যা সমাধানের কৌশল ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়। সিরিজে সে বার্তা দেওয়া হয়েছে নিউজিল্যান্ডের মাউরি সংস্কৃতির হাকা নৃত্য থেকে। দেশটির রাগবি দল প্রায়ই ম্যাচের সময় হাকা পারফর্ম করে। যেখানে সামনে আসা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অনুপ্রেরণা পেতে গাওয়া হয়,‘এটাই মৃত্যু, এটাই জীবন। সামনে আগাও, আরেক পা সামনে আগাও, দেখবে সূর্য আলো দেবে।’
অন্যান্য স্পোর্টস ড্রামা থেকে ‘নো সাইড ম্যানেজার’ কিছুটা আলাদা। এখানে শুধু খেলোয়াড়দের গল্প বলা হয়নি। কর্পোরেট অফিসের বাস্তবতা, নেতৃত্বের চাপ এবং দলগত মনোবল বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জগুলোর দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। কিমিশিমার চরিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কীভাবে একজন ম্যানেজার কৌশলগত চিন্তাভাবনা, মানবিক যোগাযোগ ও ধৈর্যের মাধ্যমে দলীয় পারফরম্যান্স পাল্টে দেন।
তবে কিছু অংশে গল্পের গতি ধীর হয়ে যায়। কিছু দৃশ্যের নাটকীয়তা অবাস্তব লাগে। মোট দশ পর্বের সিরিজ। একেকটি এপিসোডের ব্যাপ্তি ১ ঘণ্টার বেশি। ২০১৯ সালে বানানো সিরিজটি ওই সময়ের জন্য মানানসই। কিন্তু ২০২৫ সালে শর্টস আর রিলসের ব্যাপকতার যুগে এত লম্বা সিরিজ দেখাটা ধৈয্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সমান।