আলজেরিয়ার সরকার রাজধানী আলজিয়ার্সে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক বৃহৎ সংহতি-মিছিল আয়োজনের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছে। এই মিছিল আয়োজনের আবেদন করেছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল, যার মধ্যে ছিল র্যালি ফর হোপ ফর আলজেরিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টি ও মুভমেন্ট অব সোসাইটি ফর পিস। সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
আলজেরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ সীমিত ও বন্ধ স্থানে অনুষ্ঠিত হলেই ভালো। তারা জনসমাবেশ বা রাস্তায় বিক্ষোভকে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি হিসেবে দেখছে। মূলত, ২০১৯ সালের ‘হিরাক আন্দোলন’-এর স্মৃতি এখনো তাজা। সে সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতেফলিকাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল মাদজিদ তেববুনের শাসনামলেও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে কঠোরতা অব্যাহত রয়েছে।
সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন, মুসলিম বিশ্বে জনমত তৈরি ও বিভিন্ন সম্মেলনে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য রেখেছে। তাদের মতে, জনগণের আলাদাভাবে রাস্তায় নামার দরকার নেই। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি সরকারের এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশল, যাতে অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ও সংগঠিত আন্দোলনের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আলজেরিয়ায় মাত্র দুটি প্রো-প্যালেস্টাইন জনসভা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয়টি হয় ২০২৫ সালের এপ্রিলে, তাতে মাত্র এক হাজারের মতো মানুষ উপস্থিত ছিল। এরপর থেকে বড় কোনো সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি আর পাওয়া যায়নি।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে নতুন করে জনরোষের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা। আলজেরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি বুখলেফ মন্তব্য করেছেন, ২০১৯ সালের আন্দোলনের আগুন এখনো পুরোপুরি নিভে যায়নি। সরকার সংহতির নামে যেকোনো জনসমাগমকে সরকারবিরোধী প্ল্যাটফর্মে রূপ নেয়ার আশঙ্কায় অনুমতি দিতে চাইছে না।
এদিকে প্রতিবেশী দেশ মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, সেখানেও বড় বড় ফিলিস্তিনপন্থি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মরক্কোর মিডিয়া এই সুযোগে আলজেরিয়ার ‘মতপ্রকাশের দমননীতির’ সমালোচনায় সরব হয়েছে। তাদের মতে, আলজেরিয়া আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ালেও নিজের মাটিতে সংহতির কণ্ঠস্বরকে দমন করছে।
তথ্যসূত্র : মিডলইস্ট আই