একসময় বলা হতো বেশি ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। চীনে বড় এক সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে চালানো গবেষণায় অন্তত একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে প্রতিদিন একটি ডিম খেলে হৃদ্যন্ত্র বা শরীরের রক্ত সঞ্চালনে কোনো ঝুঁকি তৈরি হয় না। বরং প্রতিদিন একটি ডিম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
বহুদিন পর্যন্ত ডিমকে ‘শরীরের শত্রু’ বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ডিম স্যালমোনেলা জীবাণুর উৎস, ডিম রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ডিম খেলে রক্তচাপ বাড়ে—এমন ধারণা ছিল অনেকেরই। কিন্তু এখন ডিম নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতবাদ পাল্টে যাচ্ছে।
গবেষণা অনুযায়ী, একটি প্রমাণ সাইজের ডিমে (৫৮ গ্রাম) ৪ দশমিক ৬ গ্রাম চর্বি থাকে। এর মাত্র চার ভাগের এক ভাগ স্যাচুরেটেড বা জমাট চর্বি, যা ক্ষতিকর ভাবা হয়। কারও যদি আগে থেকে কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ বা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা না থাকে, তবে এই পরিমাণ কোলেস্টেরল মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।
দিনে কয়টি ডিম খাবেন
ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি ও বি১২। এ ছাড়া আছে লুটেইন ও জিয়াস্যানথিন নামক দুটি প্রয়োজনীয় উপাদান, যা প্রবীণ বয়সে চোখের ক্ষতি ঠেকাতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুমে কিছুটা ভিটামিন ডি থাকে। তবে কোনো কিছুই বাড়তি খাওয়া ভালো নয়। ডিম যদিও ‘প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস’, কিন্তু একটা ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে যেন অন্য খাবার থেকেও আমরা প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাই, যা অনেক সময়ই শরীরের জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি।
কীভাবে ডিম খাওয়া ভালো
ডিম রান্নার সবচেয়ে সহজ, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায় হলো ডিম সেদ্ধ করা বা পানিতে ডিম পোচ করা। ডিম ভেজে না খাওয়াই ভালো। কারণ, ডিম যে তেলে বা মাখনজাতীয় চর্বিতে ভাজা হয়, তাতে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
কাঁচা ডিম বা হালকা করে রান্না ডিমও পুষ্টিযুক্ত। তবে সেই ডিম স্যালমোনেলা–জাতীয় জীবাণুমুক্ত হতে হবে। জীবাণু সংক্রমণের উদ্বেগ থাকলে ডিম রান্না করে খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
কখনো এমন ডিম কিনবেন না যা ভাঙা বা ফাটা। ডিম সামান্য ফাটা থাকলেও সেখানে ধুলাবালি বা জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। ডিম রাখার বিশেষ যে বক্স ফ্রিজে থাকে, সেখানে ডিম সবচেয়ে ভালো থাকে। বক্সের ভেতরে থাকলে ডিমের সাদা অংশ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। বরফে হিমায়িত অবস্থায় ডিমের সাদা ও কুসুম ভালো থাকে তিন মাস পর্যন্ত।
ইসরাত জাহান, পুষ্টিবিদ, স্পেশালাইজড গ্যাস্ট্রোলিভার কেয়ার, ধানমন্ডি, ঢাকা