মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। আলোচনা সভাটি আয়োজন করা হয় ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে।
উপদেষ্টা বলেন, “মাদকের অবৈধ পাচার ও অপব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “যেকোনো দেশের উন্নতির মূল শক্তি হলো কর্মক্ষম যুবসমাজ। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও দক্ষ এই যুব সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা না করলে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়।”
মাদকের চোরাচালানে নারী, শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফলে অপরাধপ্রবণতা যেমন বাড়ছে, তেমনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ।” সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়সমূহের সমন্বয়ে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, নতুন ধরনের সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক মাদকের আগ্রাসন রোধে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এসব মাদকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ জোরদার করা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সজাগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “১৮ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ২ হাজার ৯৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৬২২ জন এনফোর্সমেন্টে। এত স্বল্প জনবলে ৬৪ জেলা, ৮ বিভাগীয় কার্যালয় ও একটি বিশেষ জোনে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী বলেন, “সামাজিক প্রতিরোধ এখন অনেক কম দেখা যায়। সবাইকে এগিয়ে এসে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, “বাংলাদেশে মাদক উৎপাদন না হলেও বিশাল সীমান্তপথ ব্যবহার করে মাদক প্রবেশ করছে। আমরা অর্থ দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছি।” তিনি জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণে তিনটি কৌশল বাস্তবায়ন হচ্ছে—সরবরাহ হ্রাস, চাহিদা কমানো এবং চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণ। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ।