ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে একাধিক সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মনিপুরে বিদ্রোহী গ্রুপের হামলার পর, এবার রকেট আঘাতের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের চিন্তা বেড়েছে। মনিপুরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে দিল্লির কাছে। এই রাজ্যটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে অবস্থিত, যা দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ—বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চীন ও মিয়ানমারের সীমানার সাথে সংযুক্ত। এই অঞ্চলকে ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে গণ্য করা হয়, ফলে এর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
মনিপুরে চলমান সংঘাত দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ফল। বিশেষ করে মেতি ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ থেকে এই সংকটের শুরু। রাজ্যের জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেতি এবং ৪৮ শতাংশ কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। সাম্প্রতিক অশান্তির সূচনা হয় আদালতের একটি আদেশকে কেন্দ্র করে, যেখানে ভূমির অধিকারের প্রশ্নে মেতি জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। এর জেরে সংঘর্ষে ১৫৪ জন নিহত এবং হাজার হাজার উপজাতি মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। প্রায় ৬০ হাজার কুকি মিজোরাম, মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, ভারতের অরুণাচল প্রদেশে চীনের অনুপ্রবেশ নতুন করে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চীনা সেনাবাহিনী প্রদেশের ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে এবং অঞ্জু জেলার কাঁপা এলাকায় তাদের ক্যাম্প বসানো হয়েছে। ভারত-চীন সীমান্তের কাছে ম্যাকমোহন লাইন থেকে এই অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কয়েক বছর আগে ওই এলাকায় দুই যুবক নিখোঁজ হন। স্থানীয়রা দাবি করে, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তাদের বন্দী করেছে, তবে চীন এই অভিযোগ এখনো স্বীকার করেনি।
এর আগেও চীনের পক্ষ থেকে অরুণাচলে অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালে চীনা বাহিনী অরুণাচল সীমান্তে কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেছিল, এবং ২০২০ সালেও একাধিকবার অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পরও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সরাসরি সংঘাতের ঘোষণা আসেনি, তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেও রাজনৈতিক ও সামাজিক অশান্তি চলমান রয়েছে। মনিপুর, ত্রিপুরা, আসাম সহ সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ এবং বঞ্চনার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। এই অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা না হলে দেশীয় সীমানা সংরক্ষণ নিয়ে মোদি সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে।