Saturday, August 2, 2025
প্রধান পাতাখেলাক্লাব বিশ্বকাপের ১০,৫৪০ কোটি টাকার প্রাইজপুল থেকে কোন দল কত পেল?

ক্লাব বিশ্বকাপের ১০,৫৪০ কোটি টাকার প্রাইজপুল থেকে কোন দল কত পেল?

নতুন ফরম্যাটের ক্লাব বিশ্বকাপ ঘিরে সমালোচনা যেমন ছিল, তেমনি এর ১০ হাজার ৫৪০ কোটি টাকার (প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ৭২৬ মিলিয়ন পাউন্ড) প্রাইজমানি ছিল ক্লাবগুলোর জন্য বিশাল প্রেরণা।

এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে অংশ নেওয়া ৩২টি ক্লাবের মধ্যে ৫২৫ মিলিয়ন ডলার (৩,৬৬৫ কোটি টাকা) ভাগ করা হয়েছে অংশগ্রহণ ফি হিসেবে, আর বাকি ৪৭৫ মিলিয়ন ডলার (৩,৩১৮ কোটি টাকা) পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে বণ্টন করা হয়েছে।

মাঠের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি প্রাইজমানির দিক থেকেও সবচেয়ে বড় বিজয়ী চেলসি। তারা প্রায় ৮৪ মিলিয়ন পাউন্ড, অর্থাৎ প্রায় ১ হাজার ২১৮ কোটি টাকা পেয়েছে।

 
ক্লাবমোট প্রাইজমানি (মিলিয়ন পাউন্ড)মোট প্রাইজমানি (কোটি টাকা প্রায়)
চেলসি84.0১,২১৮ কোটি টাকা
পিএসজি78.4১,১৩৬ কোটি টাকা
রিয়াল মাদ্রিদ66.5৯৬৫ কোটি টাকা
ফ্লুমিনেন্সে50.4৭৩৬ কোটি টাকা
বায়ার্ন মিউনিখ42.7৬১৯ কোটি টাকা
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড38.4৫৫৭ কোটি টাকা
ম্যানসিটি37.8৫৪৮ কোটি টাকা
পালমেইরাস29.1৪২২ কোটি টাকা
ইন্টার মিলান26.3৩৮১ কোটি টাকা
আল-হিলাল25.0৩৬৩ কোটি টাকা
বেনফিকা23.0৩৩৪ কোটি টাকা
ফ্লামেঙ্গো20.3২৯৪ কোটি টাকা
বোটাফোগো19.6২৮৪ কোটি টাকা
জুভেন্তাস19.6২৮৪ কোটি টাকা
পোর্তো17.6২৫৫ কোটি টাকা
অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ17.4২৫২ কোটি টাকা
মন্টেরেই15.5২২৫ কোটি টাকা
ইন্টার মায়ামি15.5২২৫ কোটি টাকা
রিভারপ্লেট13.3১৯৩ কোটি টাকা
বোকা জুনিয়র্স12.6১৮৩ কোটি টাকা
আরবি সালজবার্গ11.6১৬৮ কোটি টাকা
মামেলোদি সান্ডাওনস9.2১৩৩ কোটি টাকা

দ্রষ্টব্য:

  • টাকার অঙ্ক প্রায় হিসাব করা হয়েছে (১ পাউন্ড ≈ ১৪৫ টাকা ধরে)।

  • সব ক্লাবের প্রাইজমানিতে অংশগ্রহণ ফি ও পারফরম্যান্স বোনাস দুই-ই অন্তর্ভুক্ত।

ফাইনালে হারা পিএসজিও পেয়েছে প্রায় ৭৮.৪ মিলিয়ন পাউন্ড, অর্থাৎ প্রায় ১,১৩৬ কোটি টাকা।

রিয়াল মাদ্রিদ পেয়েছে প্রায় ৬৭ মিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় ৯৬৫ কোটি টাকা।

অন্য দলগুলোর প্রাপ্তি

ইউরোপীয় ক্লাবগুলো গড়ে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন পাউন্ড বা ৫৬৫ কোটি টাকা করে আয় করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাবগুলো গড়ে ২৪ মিলিয়ন পাউন্ড, যা প্রায় ৩৪৮ কোটি টাকা।

অকল্যান্ড সিটির ‘জ্যাকপট

ছোট দল অকল্যান্ড সিটি শুনতে ছোট মনে হলেও, তাদের আয় প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন পাউন্ড, অর্থাৎ প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। যদিও এই অঙ্ক তুলনায় কম মনে হতে পারে, তাদের জন্য এটি বিশাল প্রাপ্তি। ২০২৪ সালে তাদের মোট বার্ষিক আয় ছিল মাত্র প্রায় ৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রাইজমানি তাদের বার্ষিক আয়ের প্রায় সাত গুণ!

তবে ফুটবল অর্থনীতিবিদ কিয়েরন ম্যাগুইরের মতে, এই বিশাল অর্থলাভ লিগের প্রতিযোগিতার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। ‘তাদের এই আয় ভবিষ্যতে লিগে অন্য দলের পক্ষে প্রতিযোগিতা করা কঠিন করে তুলবে। তারা যদি দলে বিনিয়োগ করে, তখন বাকি ক্লাবগুলোর পক্ষে তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে,’ বলেন ম্যাগুইর।

এই প্রাইজমানির অর্থ ইউরোপের ক্লাবগুলোর ট্রান্সফার বাজেটেও সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। উয়েফার নিয়ম অনুযায়ী, ক্লাবগুলো তাদের আয়ের ৭০% পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে বেতন, ট্রান্সফার ও এজেন্ট ফিতে। ফলে, প্রতি ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড আয় করলে অতিরিক্ত ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় ৫০৮ কোটি টাকা খরচের সুযোগ তৈরি হয়।

ডর্টমুন্ড, যারা প্রায় ৫৮ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৮৪১ কোটি টাকা) আয় করেছে, এরই মধ্যে তাদের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফারের বেশিরভাগ অংশ এই আয় থেকে মিটিয়ে ফেলেছে।

চেলসি ১৯৮ মিলিয়ন পাউন্ডের (প্রায় ২,৮৭১ কোটি টাকা) খেলোয়াড় কিনেছে, যার মধ্যে ১,২১৮ কোটি টাকা এসেছে ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে।

ম্যানচেস্টার সিটি শেষ ষোলোতে বিদায় নিলেও প্রায় ৩৮ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা) আয় করেছে, যা তাদের সামার ট্রান্সফারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান।

রিয়াল মাদ্রিদ পর্যন্ত লিভারপুলকে ৮.৪ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ১২২ কোটি টাকা) দিয়েছিল ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডকে আগাম পাওয়ার জন্য, যা মাত্র তিন ম্যাচেই রিকভার হয়ে গেছে।

সমর্থকদের জন্য মিশ্র অনুভূতি

অর্থনৈতিকভাবে এই অর্জন ক্লাবগুলোর জন্য আশীর্বাদ হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক চাপ আরও বাড়বে।

‘অ্যাকাউন্ট্যান্টরা খুশি; কিন্তু সমর্থক এবং খেলোয়াড়রা হয়তো ততটা নয়। খেলোয়াড়দের সুরক্ষার দিক থেকে আমরা সংকটের মুখে যাচ্ছি,’ বলেন কিয়েরন ম্যাগুইর।

অর্থের লোভে মাঠের বাইরে যে চাপ তৈরি হচ্ছে, তা শেষ পর্যন্ত ফুটবলেরই ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ