Saturday, August 23, 2025
প্রধান পাতাআন্তর্জাতিকআল আকসা মসজিদ নিয়ে ভয়ংকর পরিকল্পনা

আল আকসা মসজিদ নিয়ে ভয়ংকর পরিকল্পনা

আল আকসা মসজিদের ভেতরে ইহুদিরা দলবদ্ধভাবে উচ্চস্বরে প্রার্থনা করছে, গান গাইছে, নাচছে এবং ইসরায়েলি পতাকা ওড়াচ্ছে। মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদে এমন দৃশ্য কিছুদিন আগেও ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু গত মাসে এসব ঘটনাই ঘটেছে।

ফিলিস্তিনি এবং বিশ্ব মুসলিমদের কাছে আল আকসা শুধু একটি মসজিদ নয়, বরং স্বাধীনতা, আত্মপরিচয় ও মুক্তির সংগ্রামের প্রতীক। অন্যদিকে ইহুদিদের বিশ্বাস, এ স্থানেই নির্মিত হবে তাদের তৃতীয় মন্দির বা ‘থার্ড টেম্পল।’

দীর্ঘদিন ধরে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে আল আকসায় কেবল মুসলিমদের প্রার্থনার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করার পর থেকে ধীরে ধীরে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয় এবং বিপরীতে ইহুদিদের প্রবেশাধিকার বাড়ানো হয়। বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ইসরায়েলি বসতিতে হামলার পর থেকে এ চর্চা আরও বেড়েছে।

বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও আঞ্চলিক উত্তেজনার মাঝেই আল আকসা নতুন এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক ফিলিস্তিনি আশঙ্কা করছেন, মসজিদটির ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পরিচয় মুছে দিয়ে এটিকে ধাপে ধাপে ইহুদিদের উপাসনালয়ে রূপান্তর করা হচ্ছে।

প্রথমে নির্দিষ্ট কিছু দিনে ইহুদিরা আল আকসায় প্রবেশ করলেও ২০১৭ সাল থেকে এটি প্রায় প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, ফজরের নামাজের পর ও জোহরের নামাজের পর ইহুদিদের দলবদ্ধভাবে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে মসজিদ প্রাঙ্গণকে মুসলিমদের পাশাপাশি ইহুদিদেরও প্রার্থনাস্থল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

আল আকসার ওপর ইসরায়েলের কার্যত সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে আগের চুক্তিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে ইসরায়েলি সংসদ সদস্য অমিত হালেভি মসজিদ কমপ্লেক্সকে মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, কমপ্লেক্সের দক্ষিণাংশের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে এবং বাকি অংশ, যেখানে ‘ডোম অব দ্য রক’ অবস্থিত, তা ইহুদিদের জন্য সংরক্ষিত হবে।

এক বছর পর কট্টরপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এই ধারণার প্রতি সমর্থন জানান। যদিও তিনি সরাসরি মসজিদ ভাগ করার কথা বলেননি, তবে কমপ্লেক্সের ভেতরে একটি সিনাগগ বা ইহুদি উপাসনালয় স্থাপনের পক্ষে অবস্থান নেন।

সর্বশেষ, চলতি বছরের মে মাসে অর্থমন্ত্রী বেজায়েল স্মোরিচ ‘জেরুজালেম দিবস’ উপলক্ষে এক সমাবেশে ঘোষণা দেন, তারা ইসরায়েলের সীমান্ত প্রসারিত করবেন এবং আল আকসায় তৃতীয় মন্দির পুনর্নির্মাণ করবেন।

ফিলিস্তিনিদের আশঙ্কা, হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের মতোই প্রথমে আল আকসার ভেতরে একটি সিনাগগ তৈরি করে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ দখল নেওয়া হবে। এটি শুধু মসজিদের অস্তিত্বই নয়, মুসলিম বিশ্বের জন্যও গভীর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

সূত্র : মিডলইস্ট আই

আরও পড়ুন

সর্বশেষ