Monday, August 4, 2025
প্রধান পাতাআন্তর্জাতিকবাংলাদেশি পর্যটক হারিয়ে কাঁদছেন ব্যবসায়ীরা কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশে’ এক বছরে ক্ষতি হাজার...

বাংলাদেশি পর্যটক হারিয়ে কাঁদছেন ব্যবসায়ীরা কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশে’ এক বছরে ক্ষতি হাজার কোটি

এক বছর আগেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার নিউ মার্কেটের পাশেই ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মার্কুইস স্ট্রিট ঘেরা ‘মিনি বাংলাদেশ’ ছিল বাংলাদেশি পর্যটকদের আড্ডায় মুখরিত। বাংলাদেশিদের কেনাকাটা আর রসনা বিলাসের এই ঠিকানায় এখন কেবলই নীরবতা। বাংলাদেশে ছাত্র জনতার আন্দোলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর হঠাৎ যেন থমকে গেছে মিনি বাংলাদেশ। বর্তমানে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ-খ্যাত ওই এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ধাক্কা থেকে এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ওই অঞ্চল। এতে ক্ষতির অঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে ১ হাজার  কোটি রুপিরও বেশি।

কলকাতার নিউ মার্কেটের পাশে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মার্কুইস স্ট্রিট ঘেরা ‌‌‘মিনি বাংলাদেশ’ খ্যাত ওই এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য ছিল। সাশ্রয়ী হোটেল, ওপার বাংলার খাবার, কাছাকাছি রেল ও বাস টার্মিনাল আর উন্নত চিকিৎসা সুবিধার জন্য পরিচিত এলাকাটি। এক বছর আগেও মিনি বাংলাদেশের যেসব গলি বাংলাদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখর ছিল, আজ সেখানে কেবল শুনশান নীরবতা।

সেখানকার কয়েকটি ব্যবসায়ী সমিতির ধারণা, এক বছরে ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকার ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি রুপিরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। অনেকে বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান বলেন, ‘‘কেবল মিনি বাংলাদেশ এলাকায় হোটেল, খাবারের দোকান, খুচরা পণ্যসামগ্রীর দোকান, ট্রাভেল এজেন্সি, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা ও পরিবহন খাত মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা হতো। নিউ মার্কেট ও বুররাবাজারের ক্ষতি ধরলে এই অঙ্ক ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে।’’

• সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রেস্তোরাঁ, মানি এক্সচেঞ্জ ও হোমস্টে ব্যবসা

বাংলাদেশিদের অভাবে ওই এলাকার কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে অথবা স্থানীয়দের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। মার্কুইস স্ট্রিট ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, এক বছর আগেও একই সময়ে একাধিক বাস পর্যটকদের নিয়ে আসতো। যে কারণে গাড়িগুলো পার্কিং করা কঠিন হয়ে যেতো। কিন্তু আজ বেশ কিছু দিন পার হয়ে গেলেও একজন পর্যটকের দেখা মেলে না।

মার্কুইস স্ট্রিটের মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা বর্তমানে কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইনতেজার বলেন, ‘‘আমরা এখন টিকে থাকার লড়াই করছি। আমরা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম।’’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই এলাকায় মাঝারি ও ছোট আকারের প্রায় ৪০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলোকেও খরচ কমিয়ে চলতে হচ্ছে। ব্যবসা নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। আমাদের এভাবে চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন রাধুনী রেস্তোরাঁর মালিক এনসি ভৌমিক।

মিনি বাংলাদেশ এলাকায় এর আগে এমন সংকট দেখা গিয়েছিল করোনাভাইরাস মহামারির সময়। সেই সময়ের ক্ষতি সামলে ওঠার আশায় অনেকেই ঋণ নিয়ে হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁ মেরামত করেছিলেন। মার্কুইস স্ট্রিটের জনপ্রিয় এক রেস্তোরাঁর মালিকের ভাই বলেন, ‘‘আমার ভাইয়ের রেস্তোরাঁ ভালোই চলছিল। নতুন করে সাজিয়েছিলাম। এখন ব্যবসা নেই বললেই চলে। ভাই মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রতি মাসে দেড় লাখ রুপি ইএমআই দিতে হয়।’’

• ভেঙে পড়েছে পর্যটননির্ভর অনানুষ্ঠানিক খাতের অর্থনীতিও

মিনি বাংলাদেশ এলাকার যেসব স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যটকদের জন্য বাড়িতে খাবার রান্না করতেন, হোমস্টে চালাতেন, গাইড হিসেবে কাজ করতেন; তারাও এখন দিশাহীন হয়ে পড়েছেন। হোটেলের কর্মচারী, পাচক, গাড়ির চালক, দোকানদারসহ শত শত মানুষ উপার্জন হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রাসুল বলেন, ‘‘মহামারির পর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া আমি দুটি বাণিজ্যিক গাড়ি কিনেছিলাম। তখন এত ভাড়া ছিল যে, অনেক সময় কাস্টমার ফেরাতে হতো। এখন মাসে পাঁচ-ছয়টা বুকিং মেলে; যাত্রীরা স্থানীয়। আর তারা আগের মতো ভাড়া দিতে চান না। কিন্তু আমাকে ইএমআই দিতে হয়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ